৭ লাখ কোটির ৪০ শতাংশ লুটপাট চোরতন্ত্রের মূল স্তম্ভ ছিল আমলারা -দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
দেশে গত ১৫ বছরে চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র তৈরি হয়েছিলো, যাতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই অংশ নিয়েছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সংবাদ সম্মেলনে একথা বলা হয়। তবে কারা বেশি দুর্নীতিবাজ ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন কমিটি বিষয়টি নিয়ে যেসব শুনানি করেছে সেখানে এমন মত এসেছে। কারা এসব দুর্নীতি করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমাদের কাজ চোর ধরা না, চুরির বর্ণনা দেয়া। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং চুরির প্রক্রিয়া খুঁজে বের করা। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কারও কিছু বলার থাকলে দুদক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে যাওয়াই শ্রেয়। তবে যেসব খাতে বেশি দুর্নীতি হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে থাকবে ব্যাংকিং, অবকাঠামো, জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত। আইনসভা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই যখন গোষ্ঠীবদ্ধভাবে চুরির অংশ হয় সেটাই চোরতন্ত্র। রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী- তিন সহযোগী সৃষ্টি করা হলো। মূলত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনই এই বিষবৃক্ষ তৈরি করেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে শ্বেতপত্রের যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ তছরূপ ও অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে মেগা প্রকল্পগুলোতে। ১৫ বছরে প্রকল্পের খরচ গড়ে ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রকল্পগুলো শেষ করতে গড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় লেগেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার (১.৬১ থেকে ২.৮০ লাখ কোটি টাকা) রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুস, এবং বাজেট বাড়ানোর মতো বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। এতে বলা হয় রাজনৈতিক প্রভাব ব্যাংকিং খাতের সংকটকে গভীর করেছে। বিগত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল বা ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেত। ধারাবাহিক ঋণ খেলাপের ঘটনা এবং বড় ধরনের কেলেঙ্কারিগুলো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে পুঁজি অন্য দিকে সরিয়ে নিয়ে গেছে বলেও শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে।
এছাড়া অভিবাসন খাতে গত এক দশকে প্রায় সাড়ে তের লাখ কোটি টাকা সরানো হয়েছে হুন্ডিতে লেনদেনের মাধ্যমে। মূলত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে ভিসা ক্রয়ের নামে এ টাকা বিদেশে গেছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়, এ টাকা মতিঝিল-উত্তরা রুটের মেট্রোরেল নির্মাণ খরচের চারগুণ। সিন্ডিকেট ও অনৈতিক রিক্রুটমেন্ট চর্চার কারণে সত্যিকার অভিবাসী কর্মীরা ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং দেশ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ভুয়া বরাদ্দগুলোর কারণে লাখ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে পড়েছে। জলবায়ু তহবিলে দুর্নীতির অভিযোগও আনা হয়েছে শ্বেতপত্রে।
কমিটির আরেক সদস্য প্রফেসর এ কে এনামুল হক বলেন, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।
কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেতে পারত বলে জানান তিনি।
কমিটির আরেক সদস্য ম. তামিম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, এবং ১০ শতাংশ যদি অবৈধ লেনদেন ধরা হয়, তাহলে পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি বলেন, কাগজে কলমে চুরির কোনো প্রমাণ নেই। তবে তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে আমরা বলছি যে বিদ্যুৎ খাতে তিন বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে।
ম. তামিম বলেন বিদ্যুৎ খাতে দায়মুক্তির বিধান করে দুর্নীতির রাজকপাট খুলে দেয়া হয়েছিলো গত ১৫ বছরে এবং নীতি করেই দুর্নীতির পথ সুগম করে দেয়া হয়েছিলো।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে যে টাকা পাচার হয়েছে সেটা দেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধে থেকে যাবে। টাকা পাচার ধরা খুবই কঠিন। তবুও আমরা চেষ্টা করেছি।
জাহিদ হোসেন বলেন, আগে বলা হতো বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে আছে কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। তার মতে সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতি সংস্কার ও জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়া এ থেকে উত্তরণের উপায় নেই।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দীর্ঘমেয়াদে সংস্কার কার্যক্রমও ঝুঁকিতে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আমলের তথ্য উপাত্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করেছে। তাই, গ্রাজুয়েশন স্থগিত করার কোনো কারণ নেই। বরং এলডিসি না করলে তারা কী বলবে না যে সোনার সংসার রেখে এলাম সেটা শেষ করে দিলো,” আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেন তিনি।#
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ
রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো কেজি বাঘাইড় মাছ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা
সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান
গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান
দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ
বিজয় দিবস রাগবি শনিবার
প্রসিকিউটর মাহমুদকে হত্যার হুমকির অভিযোগ
বিএনপি কর্মীকে হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি গ্রেপ্তার
মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মানুষ
‘সচিবালয়ের ন্যায় দেশটাও কি অরক্ষিত?’
কসবায় ৪ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেটের জন্য অটোচালক খুন
পরশুরামে মুহুরী নদীতে পানির পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ
বগুড়া কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সিরিয়াল মৃত্যু নানামুখি প্রশ্ন
যতবার বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, ততবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে: এবিএম মোশাররফ
সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্র আছে: সারজিস আলম
শীর্ষ ফুটবলে নিজেকে আরও কয়েক বছর দেখেন ফন ডাইক
কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ
কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত